আজওয়া খেজুর খাওয়ার উপকারতা কী - আজওয়া খেজুর কেন খাওয়া উচিত।

"আসসালামু আলাইকুম" আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা জানাতে চেষ্টা করেছি যে। আজওয়া খেজুর খাওয়ার উপকারিতা কী এবং আজওয়া খেজুর কেন খাওয়া উচিত? আজওয়া খেজুর চেনার উপায়। আজওয়া খেজুর খাওয়ার নিয়ম। আজওয়া খেজুরের উপকারিতা নিয়ে নবীজি কী বলেছেন। ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক-
উপরিয়ক্ত সকল বিষয় সম্পর্কে হয়তো বা আপনাদের অজানা। তাই আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে এ সকল বিষয় বা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অতএব, মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন। আশা করছি আপনি উপকৃত হবেন "ইনশাআল্লাহ"। চলুন তাহলে এবার শুরু করা যাক-

সূচিপত্রঃ আজওয়া খেজুর খাওয়ার উপকারতা কী এবং আজওয়া খেজুর কেন খাওয়া উচিত।

ভূমিকা

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রিয় ফল ছিল খেজুর। পবিত্র কোরানে ২৬ বার এই খেজুরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ( সূরা আবাসা, আয়াত ২৭ )-এ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন," আমি জমিনে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, জয়তুন এবং খেজুরের বৃক্ষ"। পবিত্র কুরআনে ( সূরা নাহল আয়াত ৬৭ ) -এ আরও বলেছেন, "খেজুর ও আঙ্গুর থেকে তোমরা উত্তম খাদ্য তৈরি কর।

নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান লোকেদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সাতটি খেজুর দিয়ে নাস্তা করে থাকতেন। তিনি উপদেশ দিয়ে গিয়েছেন যে, পবিত্র রমজানে তোমরা খেজুর ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ইফতার করবে। তাই রোজাদার ব্যক্তিদের জন্য ইফতারের সময় খেজুর ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত।

এই খেজুর কে আজওয়া খেজুর বলা হয় কেন

এই খেজুর সাধারণত পুড়ে যাওয়া খেজুর থেকে গজানোর চারা থেকে হয়েছে। তাই এই খেজুরগুলো পেকে গেলে কালো বর্ণ হয়ে যায়। এবং এর স্বাদও অনেকটা পোড়া পোড়া গন্ধের মত মনে হয়ে থাকে। এই জন্য এর নাম আজওয়া দেয়া হয়েছে। এই খেজুরের পোড়া বীজ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজ হাতে লাগিয়েছেন। যা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুরের মধ্যে একটি। এই খেজুরের ফজিলত, গুণ বরকত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে হাদিসে যা স্বয়ং রাসূল (সাঃ) করেছেন।

আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়

আসল আজওয়া খেজুর ভালোভাবে চেনার উপায় হল এটি দেখতে অনেক কুচকুচে কালো ধরনের হয়ে থাকে। এই আজওয়া খেজুরের আকার নিয়ে বলতে গেলে, এর আকার একটু বড় সাইজের হয়ে থাক্‌ তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা ছোট হতে পারে। যদি খেজুরের মাঝ লালচে ভাব, ভেজা ভেজা ভাব, আকারে অনেকটা ছোট হলে বুঝে নিতে হবে যে এগুলো আসল আজওয়া খেজুর নয়। তাহলে এটা বুঝতে পারবেন যে এগুলো নিম্নমানের খেজুর।

আজওয়া খেজুর খাওয়ার নিয়ম

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হাদিসের মধ্যে এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সকালবেলা খালি পেটে আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনরকম বিষ ও যাদু তার ক্ষতি করতে পারবে না "ইনশাআল্লাহ"। তবে যাদের ডায়াবেটিস বা কোন জটিল রোগ রয়েছে, তাদের উচিত এটি খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ ডক্টর বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। কারণ আজওয়া খেজুর হৃদ রোগে রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে।
আমাদের রসূল (সাঃ) তার এক সাহাবীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হৃদরোগের জন্য আজওয়া দুর দিয়ে তৈরি ওষুধ খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন আমি সুস্থ হলে রাসূল (সাঃ) আমাকে দেখতে আসেন। তিনি আরো বলেছেন এ সময় রসূল (সাঃ) তার হাত আমার বুকের উপরে রাখলেন। এবং তিনি আরো বলেছেন যে আমি রসূল (সাঃ) এর হাতের কোমল ছোঁয়া বা কোমল স্পর্শ আমার হৃদয়ে অনুভব করেছি।
এরপর রসূল (সঃ) বলেন যে, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত। অতঃপর, তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা তিনি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। এবং তুমি তাকে বলবে সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুর নিয়ে বিচি সহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি বা ঔষধ তৈরি করে দেয়। (আবু দাউদ, হাদিস ৩৮৩৫)।

আজওয়া খেজুর খাওয়ার উপকার কী এবং আজওয়া খেজুর কেন খাওয়া উচিত।

আজওয়া খেজুর খাওয়ার উপকারিতা কি? এই সম্পর্কে হয়তো বা অনেকেরই অজানা। তাই আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা আজওয়া খেজুর খাবার উপকারিতা কি এই সম্পর্কে কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করব। আসুন তা জেনে নেওয়া যাক-

এই খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে যে সকল উপকার হয়ে থাকে তা হল-
  • কোষ্ঠকাঠিন্য ঠিক করে তোলে।
  • হাড়ের গঠন মজবুত করে তোলে।
  • শারীরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
  • রক্তস্বল্প ও অন্ত্রতার সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে থাকে।
  • স্নায়ু ত্বকের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • চলাচল ভালো রাখে।
  • মস্তিষ্ক ও মন শান্ত রাখে।
  • রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • ডায়রিয়ার মত মারাত্মক রোগ ও প্রতিরোধ করতে সক্ষমতা রাখে এই খেজুর।
এ সকল রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই আজওয়া খেজুর খাওয়া উচিত।

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা নিয়ে নবীজি কী বলেছেন

আজও খেজুরের উপকারিতা নিয়ে নবীজি বলেছেন বা ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালবেলা সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, তার সেই দিনে কোন বিষ ও যাদু তার উপর ক্ষতি করতে পারবে না। তবে এই সম্পর্কে আরো বলেছেন এই খেজুরের মাধ্যে মানুষের অনেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। এই খেজুর সাধারণত হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেক উপকারী ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে।

আজওয়া খেজুর কী জান্নাতি ফল

আজওয়া খেজুর জান্নাতে ফল কি না এটা অনেকে্রি জনা নেই। তাই আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা জানাতে চলেছি আজওয়া খেজুর জান্নাতি ফল কী না এই সম্পর্কে। চলুন এবার বিস্তারিত ভাবে জানা যাক-

পবিত্র মদিনায় নানা ধরনের এবং নানা স্বাদের খেজুর উৎপন্ন হয়ে থাকে। এর মধ্যে উৎকৃষ্টত্ম খেজুর হলো আজওয়া খেজুর। দেখতে সাধারণত কালো জামের মতো। কালো রঙের অসাধারণ এই খেজুর রসূল (সাঃ) এর একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পছন্দের ফল ছিল। হাদিস এটিকে জান্নাতি ফল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত," মাশরুম হল জমির বসন্ত রোগ" এই কথাটি রসূল (সাঃ) এর কিছু সাহাবী বলেছেন। তার প্রেক্ষাপটে রাসুল (সাঃ) বলেছেন মাশরুম মন্নের অন্তর্ভুক্ত এবং এর পানি চক্ষু রোগের প্রতিষেধন ঘটায়। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় যে আজওয়া খেজুর বেহেশতের খেজুরের অন্তর্ভুক্ত। এবং এটি বিশেষ রোগে প্রতিষেধক। (তিরমিজি হাদিস ২০৬৮)

বর্তমান বাজারে আজওয়া খেজুরের দাম কী রকম

বর্তমান বাজারে আজওয়া খেজুরের দাম অনেক। তবে অনেক সময় বাজারের খেজুরের দাম বেশি এবং অনেক সময় কম হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারের আজওয়া খেজুর সহ কিছু খেজুরের দাম নিচে উল্লেখ করা হলো-

বাংলাদেশে খেজুরের দাম 200 টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। খেজুরের উপর ভিত্তি করে এই সকল দাম কম বেশি করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে অনেক খেজুর রয়েছে যা ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকতে দেখা যায়। তাই খেজুরের উপর ভিত্তি করে কিছুসংখ্যক ভালো খেজুরের নাম এবং টাকার পরিমান নিচে উল্লেখ করা হল-

খেজুরের জাত/নাম - ওজন - বর্তমান দাম
  • আজওয়া খেজুর - ১ kg - ১২০০-১৬০০ টাকা।
  • মরিয়ম খেজুর - ১ kg - ১২৫০-১৩০০ টাকা।
  • জাহিদা খেজুর - ১ kg - ৪০০-৫০০ টাকা।
  • খুরমা খেহুর - ১ kg - ৩৫০-৪০০ টাকা।

শেষ কথা

সম্মানিত পাঠ্যবৃন্দ আমরা এই আর্টিকেলটি লেখার মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি যে, আজওয়া খেজুর খাওয়ার উপকারতা কী এবং আজওয়া খেজুর কেন খাওয়া উচিত, এই খেজুর কে আজওয়া খেজুর বলা হয় কেন, এই খেজুরের উপকারিতা কী, আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়, আজওয়া খেজুরের উপকারিতা নিয়ে নবীজি কি বলেছেন এবং বর্তমান বাজারে আসওয়া খেজুরের দাম কিরকম ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আলোচনা করা হয়েছে।

যদি আমাদের এই লেখা আর্টিকেল বা পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে এই পোস্টটি বা আর্টিকেলটি অন্যদের মাঝে শেয়ার করে দিন যেন তারা এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হতে পারে।

"আসসালামু আলাইকুম"
"" ধন্যবাদ""

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পয়েন্টার ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url