লাল শাক খেলে আমাদের শরীরের কী কী উপকার হয়ে থাকে

"আসসালামু আলাইকুম" লাল শাক খেলে আমাদের শরীরে কী কী উপকার হয়ে থাকে? লাল শাকের মধ্যে এমন কী উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে ? এবং কেন আমরা লাল শাক খাব ? এ সকল প্রশ্ন যদি আপনার মনে এসে থাকে তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এর মাধ্যমে আপনি এ সকল প্রশ্ন এবং লালশাকের বিষয়ে আরো খুঁটিনাটি তথ্য জানতে চলেছেন। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক লাল শাকের বিষয়ে কিছু অজানা তথ্য-
আপনি হয়তো লাল শাকের গুনাগুন এবং উপকার সম্পর্কে জানেন না। আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন লাল শাক খেলে আমাদের শরীরে কী কী উপকার হয় এবং কী কী রোগ প্রতিরোধে লাল শাক কতটা গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সম্পর্ক জানবো। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি আপনি অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।

সূচিপত্রঃ লাল শাক খেলে আমাদের শরীরে কী কী উপকার হয় এবং চাষ পদ্ধতি

ভূমিকা

লাল শাক এক ধরনের পাতা সবজি য়ার পাতার রং লাল হয়ে থাকে। এই পাতা সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায় বা খাওয়া হয়ে থাকে। এই শাক আগেকার দিনে শুধুমাত্র শীত কালিন ঋতুতে পাওয়া গেলেও বর্তমানে এই শাক পুরো বছর চাহিদা মোতাবেগ পাওয়া যায়। এই শাক রান্না করার সময় এর থেকে লাল রং বের হতে দেখা যায়।

এছাড়া এই আর্টিকেলটি থেকে আর জানতে পারবেন কিভাবে লাল শাক চাষ করা হয় ? লাল শাক খেলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার হয়? লাল শাকের পুষ্টিগুণ,ভিটামিন। এছাড়াও লাল শাকে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ নিরাময় ক্ষমতা। এবং এর মধ্যে আরো রয়েছে গর্ভাবস্থায় লাল শাক খেলে কী কী উপকার হয়ে থাকে, ইত্যাদি আরো নানা বিষয়ে বিস্তারিতভাবে নিচে আলোচনা করা হলো। আশুন জেনে নেয়া যাক এই সকল তথ্য-

লাল শাক চাষ পদ্ধতি

লাল শাকের চাষ বর্তমানে পুরো বছর হয়ে থাকে। এই শাক চাষ করার জন্য প্রথমে একটি জমি বাচাই করতে হবে, এরপর জমিটিকে ভালোভাবে চাষ করে চারা বা বিজ রোপন করতে হবে। এই শাকের দেশি বীজএর গাছ সাধারণত ৬" থেকে ১২" ইঞ্চি হয়ে থাকে এবং হাইব্রিড বীজের গাছ সাধারণত ১২" থেকে ২৪" পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই শাকের চাষে ব্যয়বহুল কম এবং অল্প খরচে চাষাবাদ করা যায় বা চাষ করা হয়ে থাকে।

লাল শাকের পুষ্টিগুণ উপাদান

সাধারণত লাল শাকের পুষ্টিগুণ উপাদান অনেক। এর মধ্যে কিছু কিছু পুষ্টি কোন কোন উপাদান কতটুকু পরিমানে রয়েছে তা নিচে তুলে ধরা হলো-

১০০ গ্রাম লালশাকে কতটুকু পরিমাণ পুষ্টিগুণ উপাদান থাকে তা হয়তো আপনি জানেন না। অতঃপর,আসুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেয়া যাক-
  • জলীয় অংশ পুষ্টিগুণ - ৮৮ গ্রাম
  • শক্তি পুষ্টিগুণ - ৪৩ কিলো ক্যালরি
  • কার্বোহাইড্রেট - ৫ মিলিগ্রাম
  • প্রোটিন - ৫.৩ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সি - ৪৩ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম - ৩৭৪ মিলিগ্রাম
এছাড়াও এই শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং আইরন, ক্যারোটিন, পটাশিয়াম ইত্যাদি আরো নানা ধরনের উপাদান এবং পুষ্টিগুণ দিয়ে ভরপুর এই সবজিটি।

লাল শাক গাছের বীজের জাত পরিচিতি

লাল শাকের গাছের যে সকল বীজের জাত আমাদের দেশে উৎপন্ন হয় তা হল-
  • আমাদের দেশে সাধারণত একটি জাতের লাল শাক চাষ করা হয়ে থাকে তা হল ("বারি লাল শাক-১")।
  • লালশাক গাছের পাতার বোঁটা বা কান্ডগুলো খুব নরম প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং অনেক উজ্জ্বল লাল রংয়ের হয়।
  • প্রতিটি গাছে সাধারণত ১৫ থেকে বৃষ্টি পাতা ধরে থাকে। এবং তা গাছের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • লাল শাকের গাছের উচ্চতা সাধারণত ৬" থেকে ১২" ইঞ্চি বা ( ২৫ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার ) হয়ে থাকে। এবং এর ওজন ১০ থেকে ১৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
  • লাল শাকের ফুলের রং সাধারণত লাল হয়ে থাকে, এবং বীজ দেখতে গোলাকার আকৃতির হয়।
  • লাল শাকের বীজের উপরিভাগের রং কিছুটা কালো এবং লাল দাগের মতো হয়ে থাকে।
অতঃপর, জেনে নেওয়া যাক লালশাকের গাছের রোগ নির্ণয়ের উপায়-

লাল শাকের গাছের রোগ নির্ণয়ের উপায়

লাল শাকের গাছের যদি রোগ আসে তাহলে আপনি কিভাবে বুঝবেন লাল শাকের কাছে রোগ আসছে তা নিচে দেয়া হল-
  • প্রথম অবস্থায় গাছের পাতায় হলুদ রংয়ের দাগ আসে এবং তা পরে সাদা রংয়ের হয়ে যায়।
  • দাগগুলো সম্পূর্ণরূপে একত্রিত হয়ে গেলে সম্পূর্ণ পাতাটি নষ্ট হয়ে যায় বা পচে যায়।
  • রোগ জীবাণু সাধারণত বাতাস এবং মাটির উর্বর শক্তি কম হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। মাটির উর্বরশক্তি কম হওয়ার পিছনে অতিরিক্ত কীটনাশক মাটির উপর ব্যবহার করা।
  • এছাড়া, তেমন কোন ধরনের রোগ লাল শাকের গাছে দেখা যায় না।

লাল শাকের গাছের রোগ প্রতিরোধ উপায়

লাল শাকের গাছের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য যে সকল কাজ আমাদের করণীয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো। আসুন, জেনে নেওয়া যাক-
  • লাল শাকের ক্ষেত্রে জমি পরিষ্কার এবং আগাছা মুক্ত রাখা অতীব জরুরি।
  • গাছে রোগাক্রান্ত পাতাগুলো সম্পূর্ণ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • রোগের আক্রমণ বেশি দেখা দিলে কীটনাশক "রোভরাল - ২ গ্রাম বা ডাইথেন-এম-৪৫ ২.৫ গ্রাম" প্রতি লিটার পানিতে মিশ্রণ করে ১০ থেকে ১২ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  • স্প্রে করার ১৫ দিনের লালশাক খাওয়া বা বিক্রি করা যাবে না। এতে সংক্রমণ রোগ হতে পারে।
  • ১৫ দিন পর সেই শাকগুলো খাওয়া বা বিক্রি করা যাবে। এতে করে কোন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
  • সময়কালের আগে বীজ বপন করলে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা থাকে।
  • সুষম সার বা বাসায় তৈরি করা সার ব্যবহার করা উত্তম।

লাল শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা

লাল শাক দেখতে সাধারণত লালচে এবং গোলাপি রংয়ের হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিনের কমতি পূরণ করে এই শাক। আমাদের দেশের অতি পরিচিত সাতগুলোর মধ্যে লাল শাক একটি অন্যতম। এই লাল শাক শরীরের মধ্যে রক্ত তৈরি এবং বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। খাবার খেতে পারে বা চিবাতে পারে এমন ছোট শিশুদের জন্য লালশাদ ভীশন উপকারী। কারণ, শিশুদের শরীরে আয়রন, ভিটামিন, আয়োডিন ও ক্যালরি প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন হয়,যা লালশাক খাওয়ার মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে।

আস্তে আস্তে শিশুর খাদ্য হজমশক্তি পরীক্ষা করে খাবারে লালশাকের পরিমাণ বাড়ানো বা কমানো যায়, এতে করে কোন সমস্যা হয় না।আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন লালশাক আইরনের উৎকৃষ্ট উৎস। এই শাক বাড়ন্ত শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও অনেক উপকারী। লাল শাক খাওয়ার মাধ্যমে অনিমিয়া অর্থাৎ রক্তশূন্যতা, নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেসার, দুর্বলতা বা ক্লান্তি, ডায়াবেটিস রোগী,অস্টি ও আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় লাল শাক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও, ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ ভালো হয়ে থাকে।

গর্ভ অবস্থায় লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভবতী অবস্থায় লাল শাক খাওয়া শিশু এবং মায়ের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। গর্ভাবস্থা থেকে মাতৃদুগ্ধ পান পর্যন্ত শিশু এবং মায়ের জন্য লাল শাক ভীষণ জরুরি। তবে এখানেও খেয়াল রাখতে হবে, বেশিরভাগ সময় গর্ভবতী মায়েদের গ্যাস এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই দুপুরের সময় খাবারের সঙ্গে শাক খাওয়া ভালো।

কারণ ইনটেসটাইন অর্থাৎ খাবার হজম শক্তির নীতিমালা বৈশিষ্ট্য অঙ্গগুলো অধিক রাতে কাজ করতে সক্ষম হয় না। সবচেয়ে বেশি সচল থাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। অতঃপর, রাতে শাক পরিহার করাই ভালো, নয়তোবা মেয়েদের মেনোপজ অর্থাৎ মা*সি*ক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মেনোপজ হয়ে যাওয়া নারীদের হার অনেক দুর্বল হয়ে যায় বা হয়ে আসে।

এবং ত্বকে প্রভাব ফেলে ত্বক খসখসে এবং চুল উস্কো খুশকো হয়ে যায়, এবং হাতের নখ চিকন হয়ে যেতে থাকে। শরীরে দেখা দেয় আয়রন, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের বিপুল ঘারতি। এমন অবস্থায় এইসব খেয়াল না রাখলে এই সময় লাল শাক হতে পারে আপনার আমার পরিবারের জন্য অপকারী বন্ধু। তাই এসব খেয়াল রাখা অতিবো জরুরী। তবে রাত ব্যতীত যেকোন সময় লাল শাক খেলে দেহে রক্ত বৃদ্ধি পাবে এবং ত্বক চুল ও নখের মধ্যে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করবে।

লাল শাক খেলে কি শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়

লাল শাক খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় না। তবে লাল শাক প্রতিদিন পরিমান মত নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রাতকানা রোগসহ আরো নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই লাল শাক যথেষ্ট উপকারী। আশ জাতীয় খাবার অংশ খুব সহজে পরিপাক বা হজম করতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করতে সহায়তা করে। যা আমাদের জন্য খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

লাল শাক সবচেয়ে বেশি কোন দেশে চাষ হয়ে থাকে

লালশাক সাধারণত বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয় বা চাষ হয়ে থাকে। কারণ, বাংলাদেশের মাটি সবজি এবং ফসল চাষ করার জন্য অনেক উর্বর। তাই এই শাক বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয়ে থাকে। অতঃপর, এই শাক আমাদের পাশীয় রাষ্ট্র ভারত সহ আরো অনেক দেশে নানা ভাবে বীজ রোপন করে চাষ করা হয়ে থাকে। তবে এর চাষ বাংলাদেশে ভালো হওয়ার কারণে প্রয়োজন অনুযায়ী পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এই শাকের বাজারজাতও অনেক ভালো হয়ে থাকে।

শেষ কথা

সম্মানিত পাঠ্যবৃন্দ আমরা এই আর্টিকেলটি লেখার মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করছি যে, লাল শাকের পুষ্টিগুণ অনুপাদান, লাল শাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা, গর্ভ অবস্থায় লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা, লালশাকের চাষ পদ্ধতি, লালশাক গাছের বীজের জাত পরিচিতি ইত্যাদি আরো নানা বিষয়ে।

যদি আমাদের এই লেখা পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে এই পোস্টটি বা আর্টিকেলটি অন্যদের মাঝে শেয়ার করে দিন। যেন তারা এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হতে পারে।

"আসসালামু আলাইকুম"
""ধন্যবাদ!""

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পয়েন্টার ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url