পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ার কারণ কী
" আসসালামু আলাইকুম" পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ার কারণ কী এর সম্পর্কে আপনি কী জানতে ইচ্ছুক? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ার কারণ কী এবং জলবায়ু কেন পরিবর্তন হয়? অতঃপর,আমরা আরো জানবো জলবায়ু পরিবর্তন কি কারনে হয়ে থাকে এই সম্পর্কে। চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেয়া যাক-
আপনি হয়তো জানেন না পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ার কারণ কী। এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন ভাবে পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পেরে যাবেন পৃথিবীতে জলবায়ু কেন পরিবর্তন হয়ে থাকে। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আসা করছি আপনি অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পাইবেন।
সূচিপত্রঃ পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ার কারণ কী
- ভূমিকা
- জলবায়ু প্রবাহের কারণ
- জলবায়ুর উপাদান সমূহ
- জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সমূহ
- প্রাকৃতিক কারণ সমূহ
- সামাজিক বা মানব সৃষ্ট কারণ সমূহ
- গ্রিন হাউজ গ্যাস কি
- বায়ুমন্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ কত থাকা উচিত
- জলবায়ুতে মিথেন, নাইট্রাস-অক্সাইড এবং এরোসল
- ক্ষতিকারক দিকগুলো
- সুন্দর রাখতে আমাদের করণীয় কাজ
অতঃপর, এ সকল বিষয়বস্তু নিচে বিস্তারিত দেয়া হলো-
ভূমিকা
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। ভৌগলিক অবস্থার জনসংখ্যার চাপ ও কৃষি নির্ভর অর্থনৈতিক কারণের সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জলবায়ু নিরুপ প্রভাবের কারণে। নিরুপ জলবায়ুর প্রভাবে বৈশ্বিক পরিবর্তনের তীব্রতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বায়ুমণ্ডল এবং সমুদ্রের উষ্ণায়ন বিশ্ব পানি চক্রে ভারসাম্যহীতা, তুষারপাত, বরফ গলা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ুজনিত দুর্যোগগুলোকে মানব সৃষ্ট প্রভাব হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কৃষি উৎপাদনে জলবায়ুর প্রভাব নিবিড় ভাবে জড়িত। ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ু থাকলে ফলন ভালো হয় না। প্রতি বৃষ্টি্ খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি এবং আরো অন্যান্য সাময়িক ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এই কথাটা ঠিক যে দুর্যোগকে ঠকিয়ে রাখা যাবে না, তবে যথাযথ পরিকল্পনা ও অভিযোজন এর মাধ্যমে ফসল উৎপন্ন দুর্যোগে ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভাব হয়ে থাকে। জলবায়ু প্রবাহের কারন নিচে উল্লেখ করা হলো।
জলবায়ু প্রবাহের কারণ
জলবায়ু প্রবাহের প্রধান কারণ হলো বায়ুমণ্ডল এবং সমুদ্রের উষ্ণায়ন বিশ্ব পানি চক্রকে ঠিক রাখা। এবং দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসার পূর্বেই জলবায়ু বা বায়ুমন্ডল এর মাধ্যমে আবহাওয়া অধিদপ্তর অফিস থেকে সংকেত পাওয়া এবং তা সঠিক সময় কাজে লাগিয়ে অনেক মানুষকে দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করা। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে জলবায়ুর উপাদান গুলো কয়টি ও কী কী ? আসুন জেনে নেই-
জলবায়ুর উপাদান সমূহ
জলবায়ুর উপাদান গুলো কী কী তা কিন্তু আমরা অনেকে জানি আবার অনেকেই কিন্তু জানিনা। তাই জলবায়ুর উপাদান সমুহ গুলো কী কী আসুন তা জানার চেষ্টা করি-
- তাপমাত্রা।
- বায়ুর চাপ।
- বায়ু প্রবাহ।
- বায়ুর আদ্রতা ও শুষ্কতা এবং
- বৃষ্টিপাত।
বায়ুর উপাদান গুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
তাপমাত্রা- তাপমাত্রার পরিমাপের উপর অনেক স্থানে জলবায়ু বিভিন্ন অংশে বা অনেক অংশে নির্ভরশীল হয়ে থাকে। কোন দেশের তাপমাত্রা বেশি হয়ে থাকলে তারা উষ্ণতম জলবায়ু উপভোগ করে থাকে। আবার অন্যদিকে তাপমাত্রা খুবই কম হয়ে থাকলে বা মধ্যম হয়ে থাকলে ওই দেশটির উপর নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর সৃষ্টি হয় বা সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন, উদাহরণ স্বরূপ সূর্যের তাপমাত্রা নিরক্ষরেখার উপর লম্বালম্বি ভাবে পড়ে ফলে এই এলাকার জলবায়ু উষ্ণ হয়ে থাকে। আবার অন্যদিকে ওই নিরক্ষরেখার উপর উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে সূর্যের কিরণ ক্রমশভাবে পড়তে থাকে ফলে এসব এলাকার তাপমাত্রা খুবই কম বা কিছুটা মাঝারি হয়ে থাকে। এই মাঝারি ধরনের তাপমাত্রাকে অনেক সময় মেরুদেশী জলবায় বলা হয়ে থাকে।
বায়ু চাপ- বায়ুচাপ জলবায়ুর একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। আবার জলবায়ুর বিভিন্ন স্থানে বায়ু চাপের মধ্যে পার্থক্য হয়ে থাকে বিধায় আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যেও পার্থক্য হয়ে থাকবে এইটা স্বাভাবিক বিষয়। বায়ুর চাপের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অনেক সময় বিভিন্ন প্রকার বায়ুর চাপের সৃষ্টি হয়। যেমন, উদাহরণ স্বরূপ বায়ুর নিরীক্ষনীয় নিম্নচাপ, বায়ুর নিরক্ষনীয় উচ্চ চাপ ইত্যাদি।
বায়ুর প্রবাহ- বায়ুর গতিবেগ অনেকটাই বেশি। এই বায়ুর গতিবেগ আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর ভীষণভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সমুদ্র হতে জলীয় বাষ্প বায়ু কোন অঞ্চলের বা কোন এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে সে সকল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বা বৃষ্টিপাত হয় এবং তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি হয়ে থাকে বা হ্রাস পায়। কিন্তু স্থলভাগ বা নিচ দিয়ে আগত বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত কম হয় বা হয় না। আবার তাপমাত্রা ও হ্রাস পায় না বরং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
বায়ুর আদ্রতা ও সুস্থতা- সাধারণত বায়ুর আদ্রতা ও সুস্থতাকে আবহাওয়া ও জলবায়ুর একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে ধরা হয় বা গণনা করা হয়ে থাকে। বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে বায়ুর আদ্রতা বেশি হয়ে থাকে, ফলে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। আবার, বায়ুতে আদ্রতা থাকলে জলবায়ু শীতল হয় এবং বায়ু শুষ্কতা জলবায়ুকে উষ্ণ বা আরামদায়ক করে তোলে। ফলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে বায়ুকে আদ্রতা করে তোলে। অপরদিকে কম জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু শুষ্ক বা শুকনা হয়ে থাকে। এই আদ্রতা বা শুষ্কতা ও জলবায়ুর উপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কোন অঞ্চলের বা কোন এলাকার বৃষ্টিপাত উক্ত অঞ্চলের বা এলাকার বায়ুর আদ্রতা ও শুষ্কতার ওপর নির্ভর করে থাকে। বায়ুর এ আদ্রতা ও শুষ্কতা যে কোন অঞ্চলে বায়ু কে শীতল বা ঠান্ডা এবং উষ্ণ বা গরম করে তোলে।
বৃষ্টিপাত- বৃষ্টিপাত আবহাওয়াকে জলবায়ুর একটি প্রধান উপাদান হিসেবে গণনা করা হয়ে থাকে। কোন স্থানে বৃষ্টিপাত বেশি হলে সেখানকার জলবায়ুর আদ্রতা বেশি হয়ে থাকে এবং সেই অঞ্চলে বা যে কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হলে বায়ুর আর্দ্রতা শুষ্ক হয় বা কম হয়ে থাকে। আবার, বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণে জলবায়ুতেও তার প্রভাব পড়ে থাকে বা তারতম্য ঘটে। অপরদিকে কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হলে সেখানকার জলবায়ুর আদ্রতা শীতল বা ঠান্ডা হয়ে থাকে। আবার অন্যদিকে কম বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় বা বেশি হয় এবং জলবায়ু শুষ্ক হয়ে থাকে।
অতঃপর, এবার জেনে নেওয়া যাক জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণসমূহ-
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহ
বিশ্বের জলবায়ু পর্যায়ক্রমে পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে, এ জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হতেই থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের মূলে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে-
- প্রাকৃতিক কারণ।
- সামাজিক বা মানব সৃষ্ট কারণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহ গুলো নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
প্রাকৃতিক কারণ সমূহ
- সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটছে।
- সূর্যের শক্তি উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং হ্রাস বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- সমুদ্রগ্রথ ও মহাসাগরসমূহের সঞ্চিত উত্তাপ শক্তির পরিবর্তন হচ্ছে।
- অগ্নিয়গিরির দংশন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- সমুদ্রের উষ্ণায়ন বিশ্ব পানিচক্রকে ঠিক রাখতে পারছে না। ইত্যাদি।
- প্রাকৃতিক এই সকল কারণের জন্য বায়ুমন্ডলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে
সামাজিক বা মানবসৃষ্ট কারণ সমূহ
- কলকারখানা, যানবাহনের আধিক্য এবং এসবের অব্যস্থাপনার কারণে পরিবেশ ও জলবায়ুর উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে।
- দৈনন্দিন কাজে ব্যাপক হারে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বেড়েই চলেছে।
- বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার বেড়ে চলেছে বা বেড়ে যাচ্ছে।
- শহরের ময়লা আবর্জনা থেকে নির্গত অনিয়ন্ত্রিত মিথেন গ্যাস নির্গমনের হার বেড়ে যাচ্ছে বা বেড়ে চলেছে।
- কৃষির বিভিন্ন কাজে নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাসে নিঃসরণ বেড়ে চলেছে।
- ফ্রিজ, ডিপ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, এবং পোশাক শিল্প সিএফসি হ্যালোন,ফ্রেয়ন গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- বায়ুমন্ডলে মিথেন ও হাইড্রোজেন গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কয়লা খনিতে উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে
অতিরিক্ত গাছপালা কাটার কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা জলবায়ু পরিবর্তনের মুক্ষম কারণ।সামাজিক বা মানব সৃষ্ট এ সকল কারণ যদি আমরা না কমায় তাহলে আমরা আবহাওয়ার ও জলবায়ুর পরিবর্তন এর কারণে অতি শীঘ্রই বিপদের সম্মুখীন হব। তাই আমাদের করণীয় সামাজিক বা মানব সৃষ্ট এ সকল কারণ গুলো কমিয়ে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের হার কমিয়ে আনতে হবে।
গ্রীন হাউজ গ্যাস কী
গ্রিনহাউস গ্যাস, যে কোন গ্যাস যার শোষণের বৈশিষ্ট্য রয়েছে ইনফ্রারেড বিকিরণ ( নিট তাপ শক্তি ) পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে নির্গত হয় এবং এটিকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে পুনরায় বিকিরণ করে, এইভাবে অবদান রাখে গ্রীন হাউজ গ্যাস। কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথের এবং জলীয় বাষ্প হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রীন হাউজ গ্যাস। এক কথায় বলতে গেলে বায়ুমন্ডলের যে সকল গ্যাস তাপীয় শক্তি সীমার মধ্যে বিকিরিত শক্তি শোষণ ও নির্গত করে সে সকল গ্যাসকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রাথমিক গ্রিনহাউস গ্যাস গুলোর মধ্যে আছে জলীয়বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন সহ আরো নানা ধরনের গ্যাস। গ্রিনহাউস গ্যাস ব্যতীত পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা হত (-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ০ ডিগ্রী ফারেনহাইট )। যা বর্তমানে রয়েছে ( 15 ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৫৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট )। সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ যেমন শুক্র,শনি, মঙ্গল, ইত্যাদির বায়ুমন্ডলেও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাস রয়েছে।
১৭৫০ সালের দিকে শিল্প বিপ্লবের পর পরই ২০১৭ সাল পর্যন্ত মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য পৃথিবীপৃষ্ঠে বায়ুমন্ডলে ৪০% কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং পৃথিবী পৃষ্ঠের বায়ুমন্ডলে বিপুল পরিমাণে ক্ষতি হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, বর্তমানে পৃথিবী পৃষ্ঠে যে হারে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হচ্ছে তা যদি অব্যাহত থাকে বা চলমান থাকে তাহলে ২০৪৭ সালের মধ্যে বস্তু তন্ত্র ও জীববৈচিত্র সহ বিভিন্ন প্রাণী, জলবায়ু ও মানুষের উপর এর মারাত্মক খারাপ প্রভাব পড়বে। সম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে বর্তমান নিঃসরণ হার ২০৩৬ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ( ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস ) পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কত থাকা উচিত
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে থাকা কয়েকটি গ্রীন হাউজ গ্যাসের একটি হল কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2 ) এর বর্তমান বিশ্ব গড় ঘনত্ব মে ২০২২ অনুযায়ী ৪২১ পিপিএম ( ০.০৪ )। শিল্প বিপ্লবের শুরু থেকে এটি ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে যা ২৮০ পিপিএম থেকে বেরে গেছে। পরিবারের দিক থেকে শুষ্ক বাতাসে ৭৮.০৯% নাইট্রোজেন,২০.৯৫% অক্সিজেন ০.৯৩% আর্গন,০.০৩% কার্বন ডাই অক্সাইড এবং সামান্য পরিমাণে অন্যান্য গ্যাস থাকে। বাতাসে এছাড়া পরিবর্তনশীল পরিমাণ জলীয় বাষ্প রয়েছে যার গড় প্রায়.১%।
এই কার্বন ডাই অক্সাইডের কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠের জলবায়ুতে নানা ধরনের বিপদজনক গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে মানুষ ও পশু পাখির বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে গ্রিনহাউস গ্যাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ুর গ্রিন হাউজে কার্বন-ডাই-অক্সাইড যদি ২৫% এর উপর বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য যতটুকু অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় ততটুকু অক্সিজেন প্রাণী অনুকূল পাবে না। তখন প্রাণী অনুকূল মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে। তাই আমাদের উচিত, যে সকল কারণের জন্য জলবায়ুতে বা বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে সে সকল মানব সৃষ্ট কারণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তাহলেই জলবায়ু এবং বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের প্রভাব কম হবে এবং প্রাণী অনুকূলের কোনো ক্ষতি হবে না।
জলবায়ুতে মিথেন,নাইট্রাস অক্সাইড এবং অ্যারোসল
মিথেন স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে মিথেন একটি বর্ণহীন ও গন্ধহীন গ্যাস । মিথেন গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাতাসের থেকেও অনেকটা হালকা হয়ে থাকে। কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায়, মিথেন গ্যাস বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা এক শতাব্দীকাল বা 30 গুণ বেশি ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে, যা খুবই আশ্চর্যজনক বিষয়।
নাইট্রোজেন এর মত বেশ কয়েকটি অক্সাইড এর মধ্যে এটিও একটি।মনোরম মিষ্টি গন্ধ এবং স্বাদ যুক্ত এটি একটি বর্ণহীন গ্যাস। এরমধ্যে দুটি পরমাণু (N) এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু (O) নিয়ে গঠিত। এটি ১৭৭২ সালে নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস আবিষ্কার হয় এবং এর নাম দেয়া হয় নাইট্রাস অক্সাইড। যা আমাদের মাঝে গ্রীন হাউজ গ্যাস নামে পরিচিত।
অ্যারোসল ধূলিকণা, বৃষ্টিপাত প্রক্রিয়াই নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি তরল বা কঠিন কণা যা এক ধরনের গ্যাস হয়ে বায়ুর মধ্যে বিচরণ করে। এবং সেগুলো আগত সৌর বিকিরণ গুলোকে প্রতিফলিত করে বা শোষণ করে। যা মেঘের উজ্জ্বলতা এবং প্রতিফলনশীলতা বৃদ্ধি কোরে জলবায়ুতে প্রভাবিত হয়ে থাকে।
ক্ষতিকারক দিকগুলো
মিথেন গ্যাসের কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠে জলবায়ু ও বায়ুমন্ডলে তাপ বৃদ্ধি পাই। এবং প্রাণী অনুকূলকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে মিথেন গ্যাসের ঘনত্ব ০.৬৫ ৭ কেজি এবং তাপমাত্রা২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা (১ atm) পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং জলবায়ু সংকট ছাড়াও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য মিথেন গ্যাস অনেক অংশে দায়ী হয়ে থাকে।এর প্রেক্ষাপটে আমরা বুঝতে পারলাম বা ধারণা করতে পারলাম যে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিলে এবং জলবায়ুতে মিথেন গ্যাসের প্রভাব কতটা মারাত্মক হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক দাবি করেছেন যে মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে থাকা নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের জন্য কিছুটা দায়ী। এটি পরিবেশের ও জলবায়ুর উপর কার্বন ডাই অক্সাইড এর চেয়েও খারাপ প্রভাব ফেলে যা খুবই বিপদজনক।
যখন অ্যারোসল দূষক শোষণ করে, তখন একটি দূষণকারী পদার্থকে পৃথিবীপৃষ্ঠের পাশাপাশি জলের দেহে জমা করতে সহায়তা করে। এটি পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্য উভয়ের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এটি নিউক্লিয়াস সরবরাহ করে এবং তার ওপর ঘনীভূত হয়ে জমাট বাঁধে এবং প্রতিফলনশীলতা বৃদ্ধি কোরে দূষণ কৃত জলবায়ুকে প্রভাবিত করে, যা প্রতিটা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর দিক।
জলবায়ু ভালো এবং সুন্দর রাখতে আমাদের করণীয় কাজ
জলবায়ু ভালো এবং সুন্দর রাখতে আমাদের বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধ হওয়া অতীব জরুরী। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মানুষকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে সজাগ ও সচেতন করতে হবে এবং কী কী কারণে জলবায়ু এইভাবে পরিবর্তন হচ্ছে তা মানুষের মাঝে তুলে ধরতে হবে। কারখানার কারো ধোঁয়া নির্গমন করতে হবে বা নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে। পরিবেশ, আবহাওয়া এবং জলবায়ুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব আনে এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সিএফসি নির্গত হয়-এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে যেন তা জলবায়ুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব না ফেলে। আরো একটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি, এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। তাহলেই পরিবেশ, আবহাওয়া এবং জলবায়ু সুন্দর থাকবে।
পয়েন্টার ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url